হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ যামানার মুসলিম শিশু সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) উদ্বেগ প্রকাশ :
মহানবী ( সা ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি কতিপয় শিশুর দিকে তাকিয়ে বললেন : আখেরুয যামানের ( শেষ যুগ) শিশুদের জন্য তাদের পিতামাতাদের ( সন্তান লালন পালনের ভুল পদ্ধতির ) কারণে আক্ষেপ ও দু:খ (ویل ) । তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল : হে রাসূলুল্লাহ (সা:) ! তাদের মুশরিক পিতা-মাতাদের কারণে ? অত:পর তিনি বললেন : না । তাদের মুমিন ( মুসলিম ) পিতা মাতাদের কারণে ( আখেরুয যামানের ঐ শিশুদের জন্য দু:খ ও আক্ষেপ ) । কারণ ঐ সব পিতামাতা ( তাদের শিশু ) সন্তানদেরকে ধর্ম ও শরিয়তের ফরয ওয়াজিব, হারাম - হালাল বিধানসমূহের কিছুই শিক্ষা ( তা'লীম ) দেবে না ( অর্থাৎ শিখাবে না ) । আর এ সব শিশু যদি নিজ থেকেও ( ধর্মীয় শরয়ী বিধিবিধান ) শিখে তাহলে তাদেরকে তাদের পিতামাতারাই ( ধর্মীয় ও শরয়ি বিধি বিধান শিখতে এবং তা আমল ও পালন করতে ) বাঁধা দেবে !! তারা ( পিতামাতারা) তাদের সন্তানরা দুনিয়ার মাল সম্পদ থেকে সামান্য কিছু আয় উপার্জন করতে পারলেই ব্যস তাতেই সন্তুষ্ট ও প্রসন্ন থাকবে । এরপর তিনি (সা:) বললেন : আমি তাদের ( আখেরুয যামানের ঐ সব পিতামাতা ) থেকে পৃথক ( অর্থাৎ তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই ) এবং তারাও আমার থেকে পৃথক ( অর্থাৎ আমার সাথে তাদেরও কোনো সম্পর্ক নেই ) !
( সূত্র : জামিউল আখবার , পৃ : ১০০ )
رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ (ص) أَنَّهُ نَظَرَ إِلَیٰ بَعْضِ الْأَطْفَالِ فَقَالَ : وَیْلٌ لِأَوْلَادِ آخِرِ الزَّمَانِ مِنْ آبَائِهِمْ . فَقِیْلَ : یَا رَسُوْلَ اللّٰهِ ( ص) مِنْ آبَائِهِمُ الْمُشْرِکِیْنَ ؟ فَقَالَ : لَا ، مِنْ آبَائِهِمُ الْمُؤْمِنِیْنَ ، لَا يُعَلِّمُوْنَهُمْ شَيْئَاً مِنَ الْفَرَائِضِ وَ إِذَا تَعَلَّمُوْا أَوْلَادُهُمْ مَنَعُوْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُمْ بِعَرَضٍ یَسِیْرٍ مِنَ الدُّنْیَا ، فَأَنَا مِنْهُمْ بَرِيْءٌ وَ هُمْ مِنِّيْ بِرَاءُ .
আখেরুয যামানের শিশুদের শিক্ষা , দেখাশোনা ও প্রতিপালনের সিংহ ভাগ তাদের পিতা-মাতাদের তত্ত্বাবধানে থাকলেও এ সব শিশুর প্রতিপালন ও শিক্ষা দীক্ষায় বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , সমাজ , দেশ ও রাষ্ট্রও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে । কিন্তু অন্তত : গত দেড় শো দুশো বছর ধরে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শাসন কবলিত হওয়ায় অধিকাংশ মুসলিম দেশের শিক্ষা , সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাশ্চাত্য ধাঁচের সেক্যুলার অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষ হয়ে গেছে । তাই বিশেষ করে ইসলামী দ্বীনী শিক্ষা মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে হয় অনুপস্থিত অথবা দিন দিন ক্ষীণ ও দুর্বল বরং অপাংতেয় হয়েই যাচ্ছে। মুসলমান শিশুদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার গরজ তাদের মুসলিম পিতা-মাতাদের মধ্যে যেমন নেই ঠিক তেমনি মুসলিম দেশগুলোর সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যেও তা পরিলক্ষিত হয় না । পিতা-মাতা থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র সবাই চায় শিশুরা দৃঢ় ধর্মীয় আকীদা - বিশ্বাস ও আমল আখলাকের অধিকারী হওয়ার চাইতে ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ্ বা যে কোন পার্থব পেশায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠুক । আগে তারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাক পরে সময় সুযোগ আসলে তারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করবে ও ধার্মিক হবে । আর এখন তো জীবনের অনেক বাকিই আছে বয়স বাড়লে পরে তখন তাদের ধার্মিক হলেই চলবে ! এমনকি তারা ( শিশুরা ) আদৌ ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষা না পেলেও তাতে কোনো আপত্তি নেই । পিতা-মাতা, সমাজ , দেশ ও রাষ্ট্র ইত্যাদি সবার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দুনিয়াবী ( পার্থিব ) শিক্ষা গ্রহণ করে এ পার্থিব ও জাগতিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া । তাই এখন পারলৌকিক সৌভাগ্য ও ধার্মিকতা ( ধর্মীয় শিক্ষা ) গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ তা হলে তো হলোই । আর না হলেও কোনো আপত্তি নেই। মহানবী (সা) আখেরী যামানার এ ধরণের মুসলিম পিতা-মাতার সাথে তার সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলেছেন এ হাদীসে । আর এই একই কারণে আখেরী যামানার এ ধরণের মুসলিম সমাজ , দেশ ও রাষ্ট্রের সাথেও যে মহানবীর (সা) সম্পর্ক নেই সেটাও এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ , মূল কারণ একটাই ।
আসলে শিশুদেরকে যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দানের পাশাপাশি পার্থিব জীবন সুচারুভাবে পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত যুগোপযোগী বৈষয়িক ও পেশাগত শিক্ষা দানও করতে হবে এবং তাদেরকে ধার্মিক মুমিন , সুশিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সকল মুসলিম পিতা-মাতা , সমাজ , দেশ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত দায়িত্ব ও কর্তব্য । আর তা করতে পারলে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সা ) এ সব পিতামাতা , সমাজ , দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন ।
ওস্তাদ রাহীমপূর আযঘাদীর লেকচার অবলম্বনে।
সংগ্রহ ও অনুবাদ :
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান